আপনি কি ইউটিউব থেকে আয় করার ৫টি উপায় খুঁজছেন? আমি ইউটিউব থেকে আয় করার ১২ পদ্ধতি বা ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয় করার উপায় গুলো আলোচনা করবো, যা আপনাকে সফল ইউটিউবার হওয়ার পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
বর্তমানে ইউটিউব শুধু বিনোদনের একটি মাধ্যম নয়, বরং একটি আয়ের সুবর্ণ সুযোগও। সঠিক পরিকল্পনা ও কৌশলে ইউটিউব চ্যানেল গড়ে তুললে ঘরে বসেই মাসে হাজার হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। চলুন জেনে নেই ইউটিউবে আয় করার জনপ্রিয় উপায়গুলো।
ইউটিউব থেকে আয় করার ১২টি পদ্ধতি
১. ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামের মাধ্যমে আয়
ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামের (YouTube Partner Program – YPP) মাধ্যমে আয় করা সম্ভব হয় ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে। এই প্রোগ্রামে যুক্ত হলে কনটেন্ট নির্মাতারা তাদের ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখানোর মাধ্যমে আয় করতে পারেন। আপনার ভিডিওতে যে বিজ্ঞাপন দেখানো হবে, সেই বিজ্ঞাপন থেকে আয়ের একটি অংশ আপনি পাবেন।
যখন আপনার চ্যানেলে ১,০০০ সাবস্ক্রাইবার ও ৪,০০০ ঘণ্টার পাবলিক ওয়াচটাইম পূর্ণ হবে (গত ১২ মাসে) অথবা ১০ মিলিয়ন (১ কোটি) Shorts ভিউ (গত ৯০ দিনে), তখন আপনি মনিটাইজেশনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। মনিটাইজেশন চালু হলে আপনি ভিডিওতে অ্যাড দেখিয়ে ইনকাম করতে পারবেন।
২. স্পন্সরশিপ ও ব্র্যান্ড ডিল করে ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয়
যখন আপনার চ্যানেল জনপ্রিয় হয়ে উঠবে, তখন বিভিন্ন ব্র্যান্ড আপনার ভিডিওতে তাদের পণ্যের প্রচারের জন্য আপনাকে অর্থ প্রদান করবে। আপনি তাদের পণ্য বা সেবা নিয়ে ভিডিও তৈরি করে বা উল্লেখ করে ভালো অঙ্কের টাকা আয় করতে পারেন।এটি ইউটিউব থেকে ইনকামের অন্যতম বড় উৎস।
৩. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে ইউটিউব থেকে আয়
আপনার ভিডিওর মাধ্যমে নির্দিষ্ট প্রোডাক্ট বা সার্ভিস রিকমেন্ড করে, অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করলে প্রতি বিক্রিতে কমিশন পেতে পারেন। যখন কোনো দর্শক সেই লিংক ব্যবহার করে পণ্য কিনবে, আপনি একটি নির্দিষ্ট কমিশন পাবেন। উদাহরণস্বরূপ, Amazon, Daraz, বা অন্যান্য অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে যোগ দিন।
৪. ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রি করে ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয়
আপনি যদি ই-বুক, কোর্স, ডিজাইন টেমপ্লেট, বা সফটওয়্যার তৈরি করেন, সেগুলো ইউটিউবে প্রমোট করে বিক্রি করতে পারেন। এতে বড় মুনাফা সম্ভব।
৫. মার্চেন্ডাইজ বিক্রি করে ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয়
মার্চেন্ডাইজ বিক্রি করে ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয় করার একটি কার্যকর উপায় হলো নিজস্ব ব্র্যান্ড বা চ্যানেলের নাম ব্যবহার করে পণ্য তৈরি ও বিক্রি করা। এটি হতে পারে টি-শার্ট, মগ, স্টিকার, হুডি ইত্যাদি। ইউটিউব কিছু নির্দিষ্ট দেশ ও চ্যানেলের জন্য “Merch Shelf” ফিচারও সরবরাহ করে, যার মাধ্যমে দর্শকরা ভিডিওর নিচেই পণ্য দেখতে ও কিনতে পারেন।
৬. মেম্বারশিপ এর মাধ্যমে ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয়
আপনার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবাররা একটি নির্দিষ্ট মাসিক ফি দিয়ে চ্যানেলের বিশেষ সদস্য হতে পারবেন। এর বিনিময়ে আপনি তাদের জন্য এক্সক্লুসিভ কন্টেন্ট, ব্যাজ, ইমোজি ইত্যাদি সুবিধা দিতে পারেন।
৭. Super Chat এবং Super Stickers থেকে আয়
লাইভ স্ট্রিম করার সময় দর্শকরা আপনাকে অর্থ প্রদান করতে পারেন Super Chat বা Super Stickers এর মাধ্যমে। এই কেনা চ্যাট বা স্টিকার থেকে আপনি আয় করতে পারবেন। এটি এককালীন ডোনেশনের মতো কাজ করে।
৮. কোর্স তৈরি ও বিক্রি করে আয়
আপনি যদি কোনো বিষয়ে দক্ষ হন (যেমন: গ্রাফিক ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, মার্কেটিং), তাহলে সেটার উপর একটি অনলাইন কোর্স তৈরি করে Ghoori Learning, 10 minutes School বা আপনার ওয়েবসাইটে বিক্রি করতে পারেন।
৯. ভিডিওতে প্রিমিয়াম কনটেন্ট বিক্রি এর মাধ্যমে আয়
আপনি চাইলে নির্দিষ্ট ভিডিওগুলো “পেইড” বা “প্রিমিয়াম” করে রাখতে পারেন এবং শুধুমাত্র যারা কিনবে তারাই ভিডিওটি দেখতে পারবে। এই ফিচারটি ইউটিউবের বাইরে Gumroad বা Patreon-এর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যায়।
১০. সাবস্ক্রিপশন প্ল্যাটফর্ম থেকে আয়
আপনার অনুগামী দর্শকদের কাছ থেকে মাসিক সাবস্ক্রিপশন ফি নিতে পারেন Patreon-এর মাধ্যমে, যেখানে আপনি এক্সক্লুসিভ ভিডিও, ব্যাকস্টেজ কনটেন্ট বা Q&A সেশন দিতে পারেন।
১১. কনসাল্টিং বা ফ্রিল্যান্সিং সার্ভিস বিক্রি থেকে আয়
আপনার ইউটিউব চ্যানেলকে একটি পোর্টফোলিও হিসেবে ব্যবহার করে আপনি কনসাল্টিং বা ফ্রিল্যান্সিং সার্ভিস অফার করতে পারেন। যেমন, আপনি যদি একজন ভালো ভিডিও এডিটর হন, তাহলে অন্যদের ভিডিও এডিট করে দেওয়ার সার্ভিস দিতে পারেন।
১২. লাইসেন্সড ভিডিও বিক্রি থেকে আয়
আপনার ভিডিও যদি কোনো সংস্থা বা মিডিয়া ব্যবহার করতে চায়, তাহলে তাদের কাছে ভিডিওর কপিরাইট বিক্রি করে ইনকাম করতে পারেন। এটি এক ধরনের প্যাসিভ ইনকামের সুযোগ।
এতক্ষন ইউটিউব থেকে আয় করার ১২ পদ্ধতি আলোচনা করা হল। আপনার কাছে কোন পদ্ধতি ভাল লেগেছে?
ভিডিও না বানিয়ে ইউটিউব থেকে ইনকাম করার পদ্ধতি
আপনি চাইলে নিজে ভিডিওতে না এসে বা নিজে ভিডিও তৈরি না করেও ইউটিউব থেকে আয় করতে পারেন। এর একটি পদ্ধতি হলো Creative Commons লাইসেন্সধারী ভিডিও ডাউনলোড করে পুনরায় এডিট করে আপলোড করাও একটি বৈধ উপায়, যদি নিয়ম মেনে করা হয়। আরও একটি উপায় হলো কিউরেটেড কনটেন্ট—যেমন টপ ১০, ফ্যাক্টস, নিউজ বা মোশন গ্রাফিক্স ভিডিও, যেখানে আপনার নিজের মুখ বা কণ্ঠ না দেখিয়েও কনটেন্ট তৈরি সম্ভব।
আপনি চাইলে AI টুল ব্যবহার করে ভয়েস ও ভিডিও জেনারেট করেও ইনকাম করতে পারেন। এছাড়া একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো YouTube Automation Channel, যেখানে স্ক্রিপ্ট রাইটার, ভয়েসওভার আর্টিস্ট ও ভিডিও এডিটর হায়ার করে আপনি ভিডিও তৈরি করান। এই পদ্ধতিগুলোতে মূলত কনটেন্ট আইডিয়া, ব্যবস্থাপনা ও মার্কেটিংয়ে দক্ষতা থাকলেই ইনকাম করা সম্ভব।
বিস্তারিত পড়ুনঃ ভিডিও না বানিয়ে ইউটিউব থেকে ইনকাম

FAQ: ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয় করার উপায়
Q: ইউটিউব থেকে মাসে কত টাকা ইনকাম করা যায়?
ইউটিউব থেকে মাসিক আয়ের পরিমাণ নির্ভর করে আপনার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা, ভিডিওর ভিউ, কনটেন্টের ধরন এবং দর্শকদের উৎসের উপর। সাধারণভাবে, ইউটিউব ভিডিওতে বিজ্ঞাপন থেকে প্রতি ১,০০০ ভিউতে ১০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত আয় হতে পারে, যা সিপিএম (Cost Per Mille) এবং আরপিএম (Revenue Per Mille/ 1000 views)-এর উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয় ।
উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার চ্যানেলে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার এবং ভালো সংখ্যক ভিউ থাকে, তাহলে আপনি প্রতি মাসে ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারেন। ১ লাখ Subscriber থাকলে ৫০,০০০ থেকে ১ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। বড় ইউটিউবাররা, যাদের লক্ষ লক্ষ সাবস্ক্রাইবার রয়েছে, তারা প্রতি মাসে ২ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন ।
তবে, এই আয়ের পরিমাণ কেবলমাত্র বিজ্ঞাপন থেকে নয়; স্পন্সরশিপ, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, মার্চেন্ডাইজ বিক্রি এবং অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে এই আয় আরও বাড়ানো যায়। সুতরাং, ইউটিউব থেকে মাসে কত টাকা ইনকাম করা যায় তা আপনার কনটেন্টের মান, নিয়মিততা এবং মার্কেটিং কৌশলের উপর নির্ভর করে।
Q: ইউটিউব থেকে আয় কি হালাল?
ইউটিউব থেকে আয় হালাল না হারাম, তা নির্ভর করে আপনি কী ধরনের কনটেন্ট তৈরি করছেন এবং কীভাবে ইনকাম করছেন তার ওপর। যদি আপনি ইসলামসম্মত, নৈতিক ও উপকারী কনটেন্ট তৈরি করেন এবং স্পন্সরশিপ, বা প্রোডাক্ট বিক্রির মাধ্যমে ইনকাম করেন—যেখানে কোনো হারাম বিষয় (যেমন: অশ্লীলতা, মিথ্যা, জুয়া বা সুদের প্রচার) নেই—তবে এই আয় ইসলামিক দৃষ্টিকোণে হালাল হিসেবে বিবেচিত হবে।
তবে, যদি কনটেন্ট বা বিজ্ঞাপন হারাম বিষয়ে সংশ্লিষ্ট হয়, তাহলে সেই আয় হারামের পর্যায়ে পড়ে যেতে পারে। ইউটিউবের অ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে হালাল ইনকাম করতে চাইলে, কিছু ক্যাটেগরির বিজ্ঞাপন ব্লক করে দিতে হবে যেমন (Sensitive categories, Arts & Entertainment, Body Art and so many) যেগুলো ইসলাম এ হারাম। তাই ইউটিউব থেকে হালাল আয় করতে চাইলে অবশ্যই কনটেন্ট এবং ইনকাম সোর্স যাচাই করে ইসলামী নির্দেশনা অনুযায়ী চলা উচিত।
Q: ইউটিউব থেকে টাকা তোলার উপায় কি কি?
ইউটিউব থেকে ইনকাম করার পর অর্থ তোলার জন্য আপনাকে প্রথমে Google AdSense অ্যাকাউন্টের সাথে আপনার ইউটিউব চ্যানেল লিংক করতে হবে। যখন আপনার আয় $100-এর বেশি হবে, তখন AdSense আপনাকে পেমেন্ট রিলিজ করে। বাংলাদেশে সাধারণত টাকা তোলার জন্য ব্যাংক ট্রান্সফার (Wire Transfer) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
আপনি আপনার AdSense অ্যাকাউন্টে স্থানীয় ব্যাংকের তথ্য (SWIFT Code সহ) সঠিকভাবে যুক্ত করলে মাস শেষে ইউটিউব আপনার আয় সেই ব্যাংকে পাঠিয়ে দেবে।
ইউটিউবে সফল হওয়ার জন্য কিছু টিপস:
- উচ্চমানের কন্টেন্ট তৈরি করুন: আপনার ভিডিওর বিষয়বস্তু, অডিও এবং ভিডিও কোয়ালিটি যেন ভালো হয় সেদিকে নজর দিন।
- নিয়মিত ভিডিও আপলোড করুন: দর্শকদের ধরে রাখতে এবং চ্যানেলের গ্রোথ বাড়াতে নিয়মিত কন্টেন্ট আপলোড করা জরুরি।
- দর্শক ধরে রাখা (Audience Engagement): কমেন্টের উত্তর দিন, দর্শকদের সাথে যোগাযোগ রাখুন এবং তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিন।
- এসইও (SEO): আপনার ভিডিওর টাইটেল, ডেসক্রিপশন এবং ট্যাগে সঠিক কিওয়ার্ড ব্যবহার করুন যাতে মানুষ সহজেই আপনার ভিডিও খুঁজে পায়।
- ধৈর্য ও অধ্যবসায়: ইউটিউবে সফলতা পেতে সময় লাগে। তাই ধৈর্য ধরে কাজ করে যান।
উপসংহার: ইউটিউব থেকে আয় করার ১২ পদ্ধতি
ইউটিউব থেকে আয় করার ৫টি উপায় নয়, অনেক অনেক আছে। তবে সফলতা আসবে ধৈর্য, ধারাবাহিকতা ও কনটেন্টের গুণমানের মাধ্যমে। আপনি যে পদ্ধতিটিই বেছে নিন, অবশ্যই দর্শকদের প্রাধান্য দিন ও তাদের জন্য ভ্যালু প্রদান করুন। ইউটিউবকে যদি শুধুই আয় নয়, একটি ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলেন—তবে ভবিষ্যতে আপনি এর প্রকৃত সুফল পাবেন।
আশা করি আই আর্টিকেল কি পরে আপনি ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয় করার উপায় গুলো জেনে গেছেন। এখন ইউটিউবে শুধু কাজ শুরু করার পালা।
আরও পড়ুন কিভাবে টাকা আয় করা যায়ঃ